কৃপা বিশ্বাস|নড়াইল
নড়াইলে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই বিভিন্ন স্থানে ব্যঙ্গের ছাতার মত গড়ে উঠেছে অবৈধ ছ’মিল (করাত কল)। পরিবেশ অধিদপ্তর এবং বনবিভাগের ছাড়পত্র ও বৈধ লাইসেন্স ছাড়াই অবৈধ ভাবে গড়ে উঠেছে অর্ধশত টিরও বেশী ছ’মিল। কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও নজরদারী না থাকায় উপজেলার যত্রতত্র গড়ে উঠেছে এসব ছ’মিল। ফলে উজাড় হচ্ছে পরিবেশ বান্ধব গাছপালা। সেই সাথে পরিবেশ মারাত্বক ভাবে হুমকিতে পড়ছে।

ছ’মিল স্থাপনের জন্য বন বিভাগের লাইসেন্স প্রাপ্তির পর নিতে হয় পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। কিন্তু, জেলায় অর্ধশত টির ও বেশি
ছ’মিলের মধ্যে বন বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত ১০৭ টির তালিকায় যথাযথ অনুমতি রয়েছে মাত্র ৯ টির। সদরে ৫ টি লোহাগড়া ২ টি এবং কালিয়া ১ টি। জেলায়
লাইসেন্স প্রক্রিয়াধীন রয়েছে ১৩ টির। এর ভিতর সদরে ১০ টি লোহাগড়া ২ টি এবং কালিয়া ১ টি৷ জেলায় মেয়াদ উর্ত্তীন্ন করাত কল রয়েছে ৪৩ টি। সদরে ১৩ টি। লোহাগড়া ১৬ টি এবং কালিয়া ১৪ টি। তালিকা ভুক্ত অবৈধ করাত কল রয়েছে ৪২ টি। সদরে ১৩ টি লোহাগড়া ১৪ টি এবং কালিয়া ১৫ টি। তালিকার বাইরে ও রয়েছে একাধিক করাতকল।এভাবে অনুমতি ছাড়া যত্রতত্র ছ’মিল স্থাপনের কারণে হুমকিতে রয়েছে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ। ছ’মিল লাইসেন্স বিধিমালায় রয়েছে, সরকারি অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বিনোদন পার্ক, উদ্যান ও জনস্বাস্থ্য বা পরিবেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কোনো স্থানের ২০০ মিটারের মধ্যে ছ’মিল স্থাপন করা যাবে না। বিধিমালায় আরো বলা আছে, এ আইন কার্যকর হওয়ার আগে কোনো নিষিদ্ধ স্থানে ছ’মিল স্থাপন করা হয়ে থাকলে আইন কার্যকর হওয়ার তারিখ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে সেগুলো বন্ধ করে দিতে হবে। যদি তা না করা হয় তবে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওইসব কল বন্ধের জন্য আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন। কিন্তু আইন আছে প্রয়োগ নেই। সদরের তুলারামপুর ইউনিয়নে তুলারামপুরে হিন্দু ধর্মাবলম্বী দের মন্দিরের সামনেই গড়ে তুলেছেন একটি ছ’ মিল ( করাত কল)। মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক জনক কুমার দাস এই অবৈধ ভাবে গড়ে উঠা এই করাত কল বন্ধের জন্য বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়ে ও কোন ফল হয়নি।প্রশাসনকে মেনেজ করেই এই করাত কল গড়ে তুলেছেন বলে জনমনে প্রচলিত আছে।

সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলায় বিভিন্ন জায়গায় ছ’মিল দীর্ঘ ১২ বছর অতিবাহিত হলেও পরিবেশ বন বিভাগের ছাড়পত্র ও বৈধ লাইসেন্স ছাড়াই অবৈধ ভাবে চলছে। এমন প্রায় অধিকাংশ ছ’মিল ১০ বছর ৭ বছর কেউবা ৫ বছর অতিবাহিত হলেও কোন বৈধতা ছাড়াই অবৈধ ভাবে চালিয়ে যাচ্ছে।

লাইসেন্স না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে ছ’মিল ব্যবসায়ী তুলারামপুর গ্রামের সেলামত শেখের ছেলে মাসুম শেখ জানান, লাইসেন্সের কি দরকার। যারা আসে তাদের কিছু দিয়ে দিলে হয়ে যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, বন বিভাগ কর্মকর্তার উদাসিনতায় আমার ফাইলটি হারিয়ে ফেলেছে নতুন করে করতে হলে ১০ হাজার টাকা লাগবে বলে জানিয়েছেন। এমন দুর্নীতির কারণে অধিকাংশ ছ’মিল মালিক লাইসেন্স করতে পারছেনা তাই আজ বড় ধরনের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।অন্যদিকে, আইনের প্রয়োগ না থাকায় সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার আগে-পরে কল চালানো নিষেধ হলেও তা মানছেন না করাতকল মালিকরা। গভীর রাত পর্যন্ত এসব কলে কাঠ কাটা হচ্ছে। কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় এসব কলে অবৈধভাবে চোরাই কাঠও কাটা হচ্ছে। এতে শব্দদূষণসহ পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এ বিষয়ে নড়াইল সামাজিক বনায়ন নার্সারি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসকে, আব্দুর রশীদ জানান,
তারা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছেন। যাদের লাইসেন্স নেই বা ট্রেড লাইসেন্সকে যারা ছ’মিলের লাইসেন্স মনে করছেন, তাদের বোঝানো হচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সালমা সেলিম জানান,পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া কোনোভাবেই ছ’মিল চালানোর নিয়ম নেই। এমনকি তাদের ছাড়পত্র ব্যতিরেকে এসব কলে বিদ্যুত সংযোগও অবৈধ বলে গণ্য হয়। তবে এ নিয়ম অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানা হচ্ছে না। শিগগিরই অবৈধ করাতকল উচ্ছেদ ও মালিকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন এ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা